আপনি কি জানেন তিমি মাছের বমির দাম কয়েক কোটি টাকা ?তিমি মাছের বমি বা “vomit of whale fish” আম্বারগ্রিস (Ambergris)
যা বিজ্ঞানীদের মতে ভাসমান সোনা বলা হয়। বহু মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কাজে লাগে এই বজ্র পদার্থ, তাই এর বাজার মূল্য বর্তমান কয়েক কোটি টাকা।
শরীর থেকে নির্গত হওয়া একটা জঘন্য তরল পদার্থের দাম এতো কেন। তাহলে আসুন এখন জেনে নেওয়া যাক সমুদ্রের এই ভাসমান সোনার (Ambergris) পিছনে লুকিয়ে থাকা আসল রহস্যটা কি ?
তিমি বা নীল তিমি (whale fish) হলো বিশ্বের সবথেকে বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী। সমুদ্রে বসবাস করার কারণে এর আকৃতি অনেকটা মাছের মতো হয় বলে আমরা তিমি মাছ (whale fish) বলে থাকি, এটি জলে বসবাসকারী একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা গভীর সমুদ্রে বসবাস করে যেখানে প্রচুর পরিমানে স্কুইড পাওয়া যায় যা এরা প্রচুর পরিমানে খায়, স্কুইড অনেকটা অক্টোপাস এর মত দেখতে সামুদ্রিক জীব।
এই স্কুইড তিমির পাকস্থলী ও অন্তের মাঝে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা হতে থাকে, সারাবছর ধরে জমা হতে থাকা এই স্কুইড ধীরে ধীরে আম্বারগ্রিস ( Ambergris) এ পরিনত হয় যখন অতিরিক্ত আম্বারগ্রিস তিমির শরীরে জমা হয়ে যায় তখন তিমি সেটা ব্রজ পদার্থ হিসেবে মুখ দিয়ে বের করে দেয়। এই আম্বারগ্রিসই হলো তিমি মাছের বমি।
এটা অনেকটা মোমের মতো পিচ্ছিল আর থকথকে হয়। প্রথম অবস্থায় এর গন্ধ এতটাই খারাপ হয় যে তা কোনো জীবের পক্ষে সহ্য করা কঠিন। এটি একটি দাহ্য পদার্থও বটে, কিন্তু এই আম্বারগ্রিস ধীরে ধীরে তার তরল অবস্থা কাটিয়ে কঠিন পদার্থে পরিনত হয়।
আর বয়স বারার সঙ্গে সঙ্গে এর মধ্যে থাকা দুর্গন্ধ পরিনত হয় সুগন্ধে। হ্যাঁ একদম ঠিক আম্বারগ্রিস (Ambergris) অনেকদিন সমুদ্রে ভাসমান থাকার পর যখন কঠিন পদার্থে পরিনত হয় তা থেকে একধরনের সুগন্ধ নির্গত হয়, যা নামি দামি পারফিউম তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।
বাজার চলতি যেসব ব্র্যান্ডেড পারফিউম এর আকাশ ছোয়া দাম দেখবেন সেগুলির বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই আম্বারগ্রিস বা তিমি মাছের বমি ব্যবহার করা হয়। শুধু পারফিউম না বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানান জীবনদায়ী ঔষধ তৈরি করতেও কাজে লাগে এই আম্বারগ্রিস (Ambergris)।
এবার প্রশ্ন হলো এই আম্বারগ্রিস (Ambergris) বা তিমির বমির এতো দাম কেন হয় ?
স্বাভাবিক ভাবে তিমি মাছ(whale fish) জলের অনেক গভীরে থাকে তাই এর নাগাল খুব সহজে পাওয়া যায় না আর নাগাল পাওয়া গেলেও যেহেতু তিমি মাছ ( Whale fish) একটি বিরল প্রজাতির জীব তাই এর স্বীকার করা যায় না, আর ধরা গেলেও তিমি মাছ খুব সহজে এই আম্বারগ্রিস নিজের শরীর থেকে নির্গত করতে চায় না। বছরে একবার বা কয়েক বছরে হয়তো একবার বমি করে এই তিমি মাছ এবং তা সংগ্রহ করাও ভীষণ রকম কঠিন প্রক্রিয়া। তাই তিমি মাছের এই বমির দাম বাজারে কয়েক কোটি টাকা। যদিও এই আম্বারগ্রিস ( Ambergris) সংগ্রহ করা ভারতীয় আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
তবে বেশ কিছুদিন আগে ভারতীয় রাজস্ব গোয়েন্দা দপ্তর খবর পান যে ডি আর আই তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন উপকূলে একদল লোক এই আম্বারগ্রিস এর চোরা করবার করছে খবর পেয়ে সচেতন হয়ে যায় ওই গোয়েন্দা দপ্তর, এবং নির্দিষ্ট অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে ওই চোরা কারবারকারী দলটিকে। তাদের কাছে থেকে ১৮.১ কেজি আম্বারগ্রিস (Ambergris) উদ্ধার হয় যার বাজার মূল্য বর্তমানে ৩১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা।
তাহলে বুঝতে পারছেন তো এই বিরল ব্রজ পদার্থের বাজার মূল্য ঠিক কতটা ?