“Maggie Noodles” ভারতবর্ষে প্রতি ১ মিনিটে ১১ হাজার ৫০০ প্যাকেট বিক্রি হয় এই ম্যাগি নুডলস। অর্থাৎ দিনে ১ কোটি ৬০ লক্ষ প্যাকেট ম্যাগি বিক্রি করে নেসলে ইন্ডিয়া সংস্থা। কিন্তু জানলে চমকে যাবেন জনপ্রিয় এই নুডলস ব্র্যান্ডটির জন্ম কিন্তু ইন্ডিয়ায় নয়। আজ থেকে ১৪১ বছর আগে সুইজারল্যান্ডের এক ব্যবসায়ীর হাত ধরে জন্ম নেয় ম্যাগি, কিন্তু ভারতবর্ষে ম্যাগির আত্মপ্রকাশ হয় আজ থেকে মাত্র ৪২ বছর আগে। কিন্তু এই ৪২ বছরে ম্যাগি যেভাবে নিজের ম্যাজিক দেখিয়েছে তা হয়তো আর কোনো ব্র্যান্ড আজ অব্দি দেখাতে পারেনি। ব্যাচেলার থেকে বিবাহিত, স্টুডেন্ট থেকে কর্পোরেট, তরুন-তরুনী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মাত্র ২ মিনিটে তৈরি হওয়া এই চটজলদি খাবার সকলেরই মন জয় করে নিয়েছে।
তাহলে চলুন আজ জেনে নিই ভারত-বাংলাদেশ সর্বোচ্চ জনপ্রিয় এই ম্যাগির আসল ইতিহাস।
সালটা ১৮৮৪ সুইজারল্যান্ডের ব্যবসায়ী জুলিয়াস ম্যাগি খেয়াল করে দেখলেন মানুষের কর্মব্যস্ততা এতটাই বেড়েছে যে তারা খাবার বানানোর জন্য আলাদা করে সময় বের করতে পারছে না। তাই বুদ্ধিমান জুলিয়াসের মাথায় একটা আইডিয়া খেলে গেলো তিনি বাজারে আনলেন প্যাকেটজাত গুঁড়ো মটরশুঁটি ও ডালের বীজ। প্যাকেট ছিঁড়ে এই গুঁড়ো খাবারগুলো একটু জলে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিলেই চটজলদি পুষ্টিকর স্যুপ রেডি। এর ঠিক দুবছরের মধ্যেই জুলিয়াস বাজারে আনলেন “ম্যাগি” মশলা যা একবার খাবারের উপর ছড়িয়ে দিলেই কেল্লাফতে। ম্যাগি মশলার ম্যাজিকে সাধারণ খাবারও হয়ে উঠলো আঙুল চাটার মতো সুস্বাদু, এখানেই থেমে থাকলেন না জুলিয়াস তিনি বাজারে আনলেন ম্যাগি সিজনিং সসও। এভাবেই কয়েক বছরের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের গন্ডি ছাড়িয়ে নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের প্রতিটি কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়লো জুলিয়াসের প্রোডাক্ট।
এরপর এলো বিশ্বযুদ্ধ একটা নয় পরপর দুটো, ফলে সেই কারণেই ব্যবসায়ে খানিকটা ভাটা পড়লো জুলিয়াসের, আর ঠিক এই সুযোগটাকেই কাজে লাগালো নেসলে কোম্পানি। ১৯৪৭ সালে তারা হাজির হলো জুলিয়াসের কাছে আর বললো “আমরা তোমার ম্যাগি ব্র্যান্ডটাকে কিনতে চাই” এরপর বিপুল পরিমাণ অর্থের চুক্তিতে নিজের ম্যাগি ব্র্যান্ডটিকে নেসলের হাতে তুলে দিলেন জুলিয়াস। কিন্তু ঠিক তারপরই যুগান্তকারী একটা কাজ করে বসলো নেসলে কোম্পানি।১৯৫৮ সালে জাপানের মুমুফুকু অনদু নামের একটা লোক “ইন্সট্যান্ট নুডলস” নামের একটা খাবার আবিষ্কার করে ফেলেছিলো ততদিনে। নেসলে ঠিক এই ইন্সট্যান্ট নুডলসের সঙ্গেই মিশিয়ে দেবে জুলিয়াস ম্যাগির তৈরি মশলা টিকে ব্যাস তারপর বাকিটা ইতিহাস, সারা বিশ্বে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো ম্যাগির জনপ্রিয়তা।
সাল ১৯৮৩ ভারতবর্ষের মাটিতে প্রথম “ম্যাগি নুডলস” নিয়ে এলো নেসলে ইন্ডিয়া।
সে সময়ে সবাই বলেছিলো ভারতীয়রা ভাত, রুটি খেতে ভালোবাসে এইসব নুডলস দুদিনেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখানে নেসলে তাদের আসল চালটা দিলো, তারা সদা ব্যস্ত ভারতবাসীদের বললো “মাত্র দু মিনিটে সুস্বাদু খাবার খেতে চান? তাহলে এই নিন ম্যাগি নুডলস”। ব্যাস এই একটা ট্যাগলাইনে কেল্লা ফতে কারণ ব্যাচেলর থেকে বিবাহিত, স্টুডেন্ট থেকে কর্পোরেট সকলেই চায় ব্যস্ততার মধ্যে চটজলদি খাবার বানাতে। আর ঠিক সেই কারণেই মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সারা ভারতবর্ষে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে ম্যাগি নুডলস। ভারতের গন্ডি পেরিয়ে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশেও প্রবেশ করে ম্যাগি নুডলস, ওপার বাংলার মানুষরাও দারুনভাবে গ্রহণ করে এই ইন্সট্যান্ট নুডলসকে। আজ উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল থেকে দক্ষিণের সমুদ্র, পশ্চিমের মরুভূমি থেকে পূর্বের উপকূল ভারতবর্ষে ম্যাগি পাওয়া যায় না এমন জায়গা প্রায় নেই বললেই চলে। হস্টেল, মেস কিংবা পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকা ভারত বাংলাদেশের প্রত্যেকটা স্টুডেন্টই কোনো না কোনো সময়ে এই ম্যাগি দিয়ে লাঞ্চ অথবা ডিনার সেরে নিয়েছে। পরবর্তীকালে অনেক কোম্পানি চেষ্টা করেছে নতুন নুডলস এনে ম্যাগির জনপ্রিয়তাকে টেক্কা দিতে কিন্তু কেউই শেষমেশ সফল হয়নি। তবে ২০১৫ সালে ম্যাগির মধ্যে লেড এবং মনো সোডিয়াম গ্লুটামেটের উপস্থিতির জন্য যখন এটিকে ব্যান করা হয় তখন একটা বড়সড় ধাক্কা খায় নেসলে ইন্ডিয়া।
কিন্তু তারপর নিজেদের ভুল শুধরে নিয়ে তারা আবার বাজারে ফিরে আসে এবং স্বমহিমায় ব্যবসা শুরু করে, আর তার প্রমাণ আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রতি মিনিটে সাড়ে এগারো হাজার প্যাকেট ম্যাগি বিক্রির রেকর্ড।