Human body inside Dirt clean_যদি আপনার শরীরে নোংরা ঠিকমত পরিস্কার না হয় তা আপনি হাজার পুষ্টিকর খাবার খান না কেন এর উপকারিতা আপনি কোনোদিনই পাবেন না। আর যখনই আপনার শরীরের নোংরা পরিস্কার হবে তখন আপনার পাচনতন্ত্র খুব ভালো ভাবে কাজ করতে পারবে, খাবার ঠিকমত হজম হবে, স্কিন পরিস্কার হতে শুরু করবে, ওজন কমানো বা বাড়ানো সহজ হয়ে যাবে। পিম্পল, দাগ যা আছে সেগুলো সব ঠিক হতে শুরু করে দেবে, বহু জটিল রোগ হওয়ার রিস্কও কমে যাবে।
সবথেকে প্রথমে আমরা জানি যে আমাদের শরীরের নোংরা জমা হয় কীভাবে?
তো দেখুন আমরা যা খাই সেই খাদ্য খাদ্যনালী দ্বারা বয়ে পেটে পৌঁছায়। পেটে অবস্থিত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড খাবারকে ভাঙতে শুরু করে। তারপর ভেঙে যাওয়া খাবার ক্ষুদ্রান্ত্রে(Small Intestine) গিয়ে পৌঁছায়, পরে মলের আকারে বৃহদান্ত্র(Large Intestine) দ্বারা শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া কালীন আমাদের অন্ত্রে (Intestine) সবথেকে বেশি নোংরা জমা হয়ে যায়। অন্ত্রের মধ্যে আঙুলের মতো দেখতে ছোটো ছোটো ঝিল্লি থাকে, এই ঝিল্লি গুলি পাকস্থলীতে ফিল্টারের মতো কাজ করে। এই ঝিল্লি গুলির ভেতরে থাকে শিরা যা আমাদের শরীরের প্রতিটি অংশের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এই শিরাগুলির দ্বারাই খাবারে অবস্থিত পুষ্টিকে রক্তের দ্বারা সারা শরীরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে এই ঝিল্লি।
কিন্তু যখন আমরা জেনে বা না জেনে ভুল খাবার খেয়ে নিই তখন ওই খাবারকে পাকস্থলী ঠিকমত ভাঙতে পারে না, যার ফলস্বরূপ এই খাবার আমাদের অন্ত্রে জমা হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই খাবার গুলি ঝিল্লির ওপর জমা হতে হতে মোটা একটি স্তর তৈরি করে দেয়। যার ফলস্বরূপ যখন ঝিল্লি খাবারে অবস্থিত পুষ্টিকে রক্তে পৌঁছনো শুরু করে তখন এর সাথে নোংরা গুলো আমাদের রক্তে মিশে যায়। তারপর রক্তের দ্বারা বয়ে গিয়ে এই নোংরা গুলি শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জমা হতে শুরু করে। যখন এই নোংরা গুলি রক্তের দ্বারা আমাদের লিভারে পৌঁছায় তখন ফ্যাটি লিভার, জন্ডিসের মতো রোগ সৃষ্টি হয়। যখন এটি কিডনিতে জমা হয় তখন কিডনি স্টোন এবং ফুসফুসে জমা হলে হাঁপানি মতো রোগের সৃষ্টি হয়। যখন রক্তের দ্বারা এই নোংরা হৃৎপিন্ডে পৌঁছায় তখন কোলেস্টেরল এবং শিরায় ব্লকেজ তৈরি হয়।
যখন এই নোংরা আমাদের স্কিনে এসে পৌঁছায় দাগ, পিম্পল, চুলকানি এবং স্কিন রিলেটেড যত ডিজিজ আছে সব হতে শুরু করে।
শরীরে ছোটো থেকে ছোটো এবং বড়ো থেকে বড়ো অসুখের মুখ্য কারন হল শরীরে জমে থাকা নোংরা। আপনার ৫টি উপায় জানতে চলেছেন যেগুলিকে আপনি সপ্তাহে যদি ১দিন করার চেষ্টা করেন তাহলে এটি আপনার সম্পূর্ণ বডি কে ডিটক্স করে দেবে।
No. 1 :- সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হওয়ার পর আপনি একগ্লাস হালকা গরম জল নিন এবং সেই জলে হাফ লেবুর রস নিন। এবার সেই লেবু জলকে আপনি আস্তে আস্তে খেয়ে নিন। জলপান করার পর সকালে ১৫-২০ মিনিট আপনি সূর্যের আলোতে থাকুন। আসলে সূর্যের কিরনে থাকা ভিটামিন-ডি আমাদের শরীরের Function-এর জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ভিটামিন-ডি আমাদের শরীরে থাকা জীবানু কে ধবংস করতে সাহায্য করে।
এটি আপনাকে প্রতিদিন করতে হবে না সপ্তাহে ১দিন করলেই যথেষ্ট।
No. 2 (Oil Pulling) :- আপনি এক চামচ নারকেল তেল বা সরষে তেল নিন। এবার এই এক চামচ তেলকে মুখে নিয়ে ১৫-২০মিনিট মুখের ভেতরে চারিদিকে ঘোরাতে থাকুন। এই তেল আমাদের মুখের ভেতরে থাকা নোংরা গুলোকে পরিস্কার করে দেয়। আমাদের জিভ(Tongue) কিডনি,হার্ট,লাংস, ফুসফুস এবং বাকি সব অর্গানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তো এই তেল জিভ দ্বারা সমস্ত অর্গান গুলোকে পরিস্কার করে দেয়। ১৫-২০মিনিট মুখে রাখার পর এবার সেই তেলকে কুলি করে ফেলে দিন এবং মুখকে ভালো করে ধুয়ে নিন।
এটিও সপ্তাহে ১দিন করলেই যথেষ্ট।
No. 3 :- এই পদ্ধতিতে আপনাকে নিজের খাওয়ারের সময়ের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেই পরিবর্তন হল, রাতের খাবার ঘুমোনোর ৩ ঘন্টা আগে খেতে হবে এবং সকালের খাবার ঘুম থেকে ওঠার ৩ ঘন্টা পরে খেতে হবে। আর এটি এই জন্যেই কারণ আপনি আপনার বডিকে যেমন পরিস্থিতিতে রাখবেন সে কিছুদিনের মধ্যে নিজেকে সেই পরিস্থিতির সাথেই খাপ খাইয়ে নেবে। আমাদের শরীরে যতপ্রকার repairing process ঘটে অর্থাৎ যত ধরনের পরিস্কার, পরিচ্ছন্নতার প্রক্রিয়া হয় সেগুলি সব আমরা যখন গভীর ঘুমে থাকি তখন হয়। কিন্তু যখন রাতে খাওয়ারের সঙ্গে সঙ্গে আপনি ঘুমোনোর জন্য শুয়ে পড়েন তখন আপনার বডির অর্গানস গুলো সেই খাবারকে রাতে হজম করানোর প্রসেসে ব্যস্ত হয়ে যায়, যার ফলস্বরূপ বডি নিজিকে ডিটক্স করার সময় পায় না। এই জন্য রাতে ঘুমোতে যাওয়ার ৩ ঘন্টা আগে খেয়ে নিন এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার ৩ ঘন্টা পর খাবার খান। এতে হবে কী রাতের খাবার গুলো ঘুমোনোর আগেই সম্পূর্ণ ভাবে হজম হয়ে যাবে এবং আপনি যখন ঘুমোবেন আপনার অর্গান গুলো ডিটক্স হয়ে যাবে।
No. 4( কী খাব? আর কী খাব না?):- কী খাবেন না জেনে নিন, যখন আপনি নিজের শরীরকে ডিটক্স করবেন তখন ১ বা ২ সপ্তাহ বেশি তেল জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। প্যাকেটের ফুড, চিপস, কোল্ডড্রিংকস এবং চিনি দ্বারা তৈরি সমস্ত প্রকার খাদ্য থেকে দূরে থাকুন। কারণ এই খাদ্য গুলি আপনার অন্ত্রে নোংরা রূপে জমা হয়।
এবার কী খাবেন জেনে নিন, আপনি আগে যেমন খাবার খেতেন তেমনই খাবেন,খাবারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে হবে না। শুধু একটি জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে যা হল শাকসবজি। যখনই খাবেন তখন মনে রাখবেন যে পাতে যেন শাকসবজি বেশি থাকে। মানে আগে খাওয়ার সময় যতটা শাকসবজি পাতে নিতেন তার থেকেও বেশি সবজি যেন এখন আপনার পাতে থাকে। শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
আর এই ফাইবারই আমাদের অন্ত্রে থাকা সমস্ত নোংরাকে টেনে মলের দ্বারা বের করে দেয়।
No. 5 :- সারাদিনের মধ্যে ২৫-৩০ মিনিট এমন একটি সময় বের করুন যে সময়টিতে আপনি Physical activity করবেন, Game খেলবেন, দৌড়াবেন, Exercise করবেন। যাই করুন কিন্তু ৩০ মিনিট যেন Physical activity করা হয়। কারণ যখন আপনি কোনো প্রকার Physical activity করেন তখন আপনার শরীর থেকে ঘাম বেরোতে শুরু করে। এই ঘাম আপনার শরীরের নোংরাকে বের করে দেয়।
তাই সারাদিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই সময় বের করুন।
এই ৫টি উপায় ছাড়াও আপনাদের একটি উপায় বলছি, যা হল Fasting। প্রতিটি ধর্মেই আপনি একটি Fasting পাবেন। যদি আপনি হিন্দু হন পুজো বা একাদশীতে Fasting হয়। যদি আপনি মুসলিম হন তাহলে রোজা রাখা হয়। আপনি হয়তো ভাবেন যে Fasting হল ধার্মিক কোনো জিনিস। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে প্রাচীনকালে লোকেরা নিজের বডিকে ডিটক্স করার জন্য Fasting করতেন।
যখন আপনি Fasting করেন তখন কোনো কিছু খাওয়া যায় না। এতে হয় কি আপনার শরীরের অর্গান গুলি নিজেকে পরিস্কার করার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়ে যায়, যার ফলে বডি নিজেকে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে পারে। তো সুযোগ পেলেই Fasting করুন।